রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
পাহাড়পুর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম। পূর্বে শেখ,মন্ডল ও ব্যাপারি নামে তিন সমাজে বিভক্ত ছিল পাহাড়পুরের মানুষ। এক সময়ে সবাই মিলে মিশে বসবাস করত এখানে। সময়ের সাথে সাথে গ্রামে বেড়েছে আধিপত্য বিস্তার। হত্যা,লুটপাট ও বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনা যেন এই গ্রামের মামুলি বিষয়।
তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের ৮ তারিখ (অক্টোবর) মঙ্গলবার বাঁধ বাজারে দোকান ঘরের জায়গা দখল নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পরে পাহাড় পুর গ্রামের লাল্টু গ্রুপ ও কটা মেম্বার গ্রুপ। লাল্টু,মাসুদ, ভুট্টো, তুহিন, সজল, সজীব, হাসান, আছান,একব্বার সঙ্গীয় ৩০ জন মিলে কটা মেম্বার গ্রুপের লোকজনের উপর হামলা করে। এই ঘটনায় কটা মেম্বার গ্রুপের রিয়াজুল ইসলাম (৩৯) নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও ঐদিন মারামারিতে উভয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন আহত হন।
এই ঘটনার পর থেকেই আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাহাড় পুর। ঘটনার দিন রাত থেকেই লাল্টু গ্রুপের লোকজন ও লাল্টুসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে আগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে কটা মেম্বারের লোকজনের বাড়িতে হামলা,ভাংচুর ও লুটপাট করে যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত বলে জানিয়েছেন কটা মেম্বার গ্রুপের রেজাউল,জাফর, রফিক, হাসান,মুক্তি ও রিয়াজ।
রফিক বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রাজমিস্ত্রীর কাজ শেষ করে বাড়ী ফিরছিলাম। এসময় বাজারের একটা লীজকৃত দোকান নিয়ে শালিসি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের আগেই লাল্টু তার দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে জখম করে। পরে লাল্টু তার লোকজন নিয়ে আমাদের ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’
তুষার নামের স্থানীয় একজন বলেন, ‘লাল্টু এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে এই হামলা চালিয়েছে। আমরা এলাকায় শান্তি চাই। কোনো সংঘাত বা মারামারি চাই না।’ লাল্টুকে গ্রেফতার করলেই এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।
এঘটনার পর থেকেই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। লুটপাটের ভয়ে উভয় পক্ষেরই লোকজন তাদের বাড়ি ঘরের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশের কার্যক্রমে ধীরগতি থাকায় এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। যে কারণে সন্ধ্যা হলেই চরম উৎকন্ঠতায় রাত পার করছে বাড়িতে থাকা নারী ও শিশুরা। উভয় পক্ষেরই শান্তি প্রিয় সাধারণ মানুষ গুলো চাওয়া একটি চূড়ান্ত শান্তি সন্ধি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সমাজ প্রতিনিধিদের দলাদলির কারনে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ দলের মানুষ ও পরবর্তীতে উসকানীতে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ৩১ শে মার্চ প্রতিপক্ষের হামলায় একই পরিবারের ব্যাপারি সমাজের নেহেদ আলী ও বকুল আলী খুন হয়। এঘটনায় উভয়পক্ষের অন্ততপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ জন আহত হয়। এঘটনায় হামলা ও মামলার ভয়ে শেখ ও মন্ডল গ্রুপের প্রায় অর্ধশত পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে যান। সেই সুযোগে প্রতিপক্ষরা তাঁদের পাকা – কাঁচা ঘরবাড়ি গুলো ভেঙে মাটিতে গুড়িয়ে দেয়। কেটে নেই গাছপালা ও মাঠের ফসল। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলে লুটপাট ভাংচুর। এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই গ্রামেই ৫ বছরে ৪ খুন, আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক,আধিপত্য বিস্তারে ধ্বংসের পথে পুরো একটি গ্রাম,আবারও যখন তখন ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।
এবিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই থানায় মামলা হয়েছে। আসামীদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত হয়েছে।